Wednesday, June 17, 2020

করোনা ভাইরাস, ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স ও খাদ্যাভাস - কি সম্পর্ক?

কোভিড-১৯ এর যে সকল লক্ষন আছে তাদের ব্যাপ্তি বেশ প্রসারিত। দেখা গেছে ১৫ ভাগ আক্রান্ত ব্যক্তি জটিল পরিস্থিতির স্বীকার, এমনকি ভেন্টিলেটর পর্যন্ত যেতে হয়েছে; আর ৮৫ ভাগ ব্যক্তি অল্প ঠান্ডা কাশি দিয়েই করোনাকে মোকাবিলা করেছে। এক বিরাট অংশতো জানেই না যে তাদের করোনা আক্রমন করেছে, কেননা তাদের কোনো লক্ষনই নেই।

কোভিড-১৯ এ কারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে? বাংলাদেশে এর সঠিক ডেটা আছে কিনা আমি জানি না। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর উপর যথেষ্ট গবেষনা করা হয়েছে এবং হচ্ছে।
WHO এর ওয়েব পেজে বলা হয়েছে, কোভিড -১৯ প্রায়শই ৬০ বছরের বেশি বয়সী লোকদের আক্রান্ত করছে। ( https://www.who.int/…/emergencies/covid-19/information/high… )
বয়স বাড়লে রোগে আক্রান্ত হবার ও সে রোগ থেকে জটিল পরিস্থিতি তৈরী হবার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়, একথা মেনে নেয়া যায় তখনই যখন কোনো পুর্ব-রোগ আপনার সঙ্গে থাকবে। বয়স্ক কিন্তু নিঃরোগ, এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রেও কি এ কথা মানা যাবে, কখনো নয়। সুতরাং, বয়স্ক এবং পুর্ব-থাকা রোগ যেমন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থুলতা, হৃদরোগ যা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে, করোনা আক্রান্ত হবার ও সে রোগ থেকে জটিল পরিস্থিতি তৈরী হবার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেয়।

অপরদিকে, ইটালি, ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ, করোনভাইরাস আক্রান্ত রোগীর প্রায় এক চতুর্থাংশের বয়স ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে রয়েছে বলে তথ্য ওয়েবসাইট স্ট্যাটিস্টা জানিয়েছে। (https://fortune.com/…/coronavirus-young-people-getting-sic…/ ) । যুবকদের মধ্যে কেন এর প্রকোপ বেশী? নিউইয়র্কের এক সমীক্ষায় বলা হয়, যাদের বয়স ৬০এর নীচে কিন্তু তারা স্থুলতা বা Obesity তে ভুগছে, তাদের ভেন্টিলেটরে যাবার প্রবনতা , যারা স্থুলকায় নয় তাদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন, যখন তাদের BMI ৩০ । যাদের BMI ৩৫, তাদের ইন্টেন্সিভ কেয়ারে যাবার প্রবনতা প্রায় ৩.৫ গুন। দু;খজনক হলেও সত্য যে, এদের জীবন- মৃত্যুর সম্ভাবনা ৫০ঃ৫০।

তাহলে বুঝা গেল, বয়স যাই হোক না কেন, করোনায় মৃত্যু ঝুঁকিতে তারাই আছেন, যারা স্থুলতা ( high BMI), ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ-এ ভুগছেন। এই সবগুলিকে আমরা দুর্বল বিপাকীয় স্বাস্থ্য ( Poor Metabolic health) হিসাবে চিহ্নিত করি যা ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স দিয়ে সহজে ব্যাখা করতে পারি।
দুঃখের বিষয় হল, আমরা এতদিন জেনে এসেছি, এগুলো নিয়ন্ত্রন করা যায়, নির্মুল করা যায় না। আমি দৃঢ়তার সাথে বলছি, দুর্বল বিপাকীয় স্বাস্থ্য ( Poor Metabolic health) কে আপনি চেষ্টা করলেই সবল করে তুলতে পারেন। এতে করে একদিকে যেমন আপনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থুলতা, হৃদরোগের মত ভয়ংকর রোগ থেকে মুক্তি পাবেন, অন্যদিকে করোনায় আক্রান্ত হলেও তা আপনাকে ইনশাল্লাহ ভেন্টিলেটর পর্যন্ত নিতে পারবে না।

আসুন প্রথমে জেনে নেই, সবল বা ভালো বিপাকীয় স্বাস্থ্য ( Good Metabolic health) কী?
সবল বা ভালো বিপাকীয় স্বাস্থ্য আমরা তখনই বলবো যখন নীচের পাঁচটি মার্কার স্বাভাবিক রেঞ্জে থাকবে।
১। রক্তের গ্লুকোজ, ২। রক্তচাপ ৩। স্থুলতা ৪। রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড এবং ৫। রক্তের HDL-
এই পাঁচটি বিষয় যে কেবল ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত তাই নয়, বরং এরা আমাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথেও নিবিড়ভাবে জড়িত।
এই পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে যে কোন তিনটি যদি স্বাভাবিক রেঞ্জে না থাকে, তবে তাকে আমরা বলবো মেটাবলিক সিন্ড্রোম ( Metabolic Syndrome or Syndrome X) যার অপর নাম দুর্বল বিপাকীয় স্বাস্থ্য (Poor Metabolic health)। মেটাবলিক সিন্ড্রোম কে গবেষকরা ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স দিয়ে ব্যাখ্যা করে থাকেন।

ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স হল, যখন ইন্সুলিনের প্রতি আপনার কোষ আগের মত আচরন করে না, অর্থাৎ, ইন্সুলিন কোষের রিসিপ্টরের সাথে যুক্ত হতে পারে না। ইন্সুলিনের দু'টি কাজঃ ১) রক্তের গ্লুকোজকে কোষের ভিতর ঢুকানো, ২) অতিরিক্ত গ্লুকোজকে রক্ত থেকে পরীষ্কার করে তাকে চর্বি বানিয়ে পরবর্তী সময় ব্যবহারের জন্য লিভারে জমা করা। রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকলে তা রক্তনালীতে ক্ষতের ও প্রদাহের সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীতে এথেরোসক্লেরোসিস (Atherosclerosis) তৈ্রী করে রক্ত চলাচলে বাঁধা দেয়, ফলে স্ট্রোক বা হার্ট এটাক হতে পারে। ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স হলে তাই রক্তে ইন্সুলিনের পরিমান যেমন বেড়ে যায়, ঠিক তেমনি, এর ফলস্বরূপ রক্তে সুগারের পরিমানও বেড়ে যায়। এর সাথে সাথে লিভারে জমাকৃত চর্বির পরিমানও বাড়তে থাকে। ইন্সুলিন সমস্ত গ্লুকোজকে সরাতে পারে না বলে, তা রক্তের নালীর ক্ষতি করে। যাদের ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স আছে তাদের এন্ডোথেলিন ১ নামে একটা পেপ্টাইড বা হরমোন নিঃসরন হয়, যা রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা কমিয়ে দেয়, রক্তনালীকে সংকুচিত করে, ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়।

তাহলে বুঝা গেল, ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স থেকেই প্রিডায়াবেটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ মাত্রার কোলেষ্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড তৈরী হয়, যা বিভিন্ন হৃদরোগের সৃষ্টি করে।
এখন প্রশ্ন হলঃ ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স কেন হল বা সহজ করে জিজ্ঞাসা করা যায়, কোষ কেন ইন্সুলিনের সঙ্গে এই ব্যবহার করলো? এর কারন হল বার বার খাওয়া বা একটু পর পর খাওয়া এবং শর্করা জাতীয় খাদ্য অত্যধিক খাওয়া। আপনি যখনই শর্করাযুক্ত খাদ্য খাবেন, তখনি আপনার ইন্সুলিন কোষের কাছে যাবে এবং তাকে গ্লুকোজ গ্রহন করতে বলবে। এভাবে বার বার কোষকে ব্যস্ত ও বিরক্ত করলে কোষও একপর্যায় ক্লান্ত (Exhausted) হয়ে পরে ও ইন্সুলিনের প্রতি বিরূপ আচরন করে। উদাহরন দিয়ে বলা যায়, আপনাকে ডাক্তার সাহেব নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে বললেন, কোনো সমস্যা হলে জানাবেন। সুযোগ পেয়ে আপনিও ডাক্তার সাহেবকে ১০ মিনিট পর পর প্রয়োজনে- অপ্রয়োজনে ফোন দিলে, উনি একসময় বিরক্ত হয়ে আপনার নাম্বারটা ব্লক করে দিবেন, এটাই স্বাভাবিক। ইন্সুলিনের ক্ষেত্রে কোষের এই আচরনকেই বলে ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স।

ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স হল মেটাবলিক সিন্ড্রোম ( Metabolic Syndrome or Syndrome X) তথা দুর্বল বিপাকীয় স্বাস্থ্য (Poor Metabolic health) এর প্রধান ট্রিগার ফ্যাক্টর। দুর্বল বিপাকীয় স্বাস্থ্য হলে অবশ্যই কিছু লক্ষন দেখা দিবে। যেমন ধরুন, আপনি দাঁড়ালে যদি আপনার পা না দেখতে পান তবে বুঝে নিতে হবে আপনি দুর্বল বিপাকীয় স্বাস্থ্য-এর দিকে ঝুঁকছেন। পুরুষের পেটের মাপ ( Waist circumference ) যদি ৪০ ইঞ্চি-এর উপর হয় এবং মহিলাদের যদি ৩৫ ইঞ্চি- এর উপর হয়, তবে এমনটি হবার সম্ভাবনা আছে। আবার, পায়ের টিবিয়া হাড়ের উপর যদি চাপ দিলে দেবে থাকে (Pitting edema) , তবে সেটাও দুর্বল বিপাকীয় স্বাস্থ্য-এর লক্ষন হতে পারে।পরীক্ষা করে দেখুন। এছাড়াও চামড়ায় আঁচিলের মত উঠা (skin tags) এবং চামড়ায় কালো দাগের আধিক্য (Acanthosis Nigricans) দুর্বল বিপাকীয় স্বাস্থ্য-এর লক্ষন।

এখন আসুন করোনা ভাইরাস আমাদের কিভাবে আক্রমন করে তা জেনে নেই।

করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে আমাদের নাকের ভিতর যায়, সেখান থেকে তা ফ্যারিংসে পৌঁছায়। এজন্য আমাদের গলা ব্যথা শুরুতে দেখা যায়। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো, তাদের এখানেই ভাইরাসের দৌরাত্য শেষ হয়। কিন্তু যদি এই ভাইরাস শ্বাস নালী হয়ে ফুসফুসে পৌঁছায়, তবে সেখান থেকে কোষে ঢুকার জন্য তার প্রবেশ পথ লাগে, যাকে বলা হয় Entry Point. আমাদের কোষের এক বিশেষ ধরনের এঞ্জাইম থাকে যার নাম ACE2 ( Angiotensin Converting Enzyme 2), যা ফুসফুস, লিভার ও অন্যান্য কোষের (হৃদপিন্ড) আবরনে থাকে, যার সাহায্যে করোনা ভাইরাস আমাদের কোষে প্রবেশ করে। এই ACE2 Enzyme এর সংখ্যা তাদের ক্ষেত্রে বাড়ে যাদের ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স ও স্থুলতা (Obesity) আছে। এছাড়াও যারা ধুমপান করেন, তাদের ও কোষে এই এনজাইমের সংখ্যা বেড়ে যায়। যত ACE2 Enzyme বাড়বে, তত ভাইরাস লোড কোষে বাড়বে।
যখন ভাইরাস আক্রমন হয়, তখন একে প্রতিরোধের জন্য আমাদের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার ( Immune System) উপর নির্ভর করতে হয়। কোষ তখন সাইটোকাইন ও গ্রোথ ফ্যাক্টর নামে প্রোটিন নিঃসরন করে, যা আমাদের হয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে সৈন্য হয়ে লড়াই করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যাদের ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স আছে তাদের ক্ষেত্রে সাইটোকাইন ও গ্রোথ ফ্যাক্টর ভাইরাসের সাথে সামঞ্জস্য হয়ে নিঃসরন হয় না, ফলে রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময়, সাইটোকাইনের নিঃসরন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে, ফলে সাইটোকাইন-এর আধিক্যের কারনে ভালো কোষও নষ্ট হয়ে যায়, যাকে সাইটোকাইন ঝড় (Cytokine Storm) বলে ,এতে ভাইরাসের সাথে লড়াইয়ে রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুরাই বিকল হয়ে পড়ে। এধরনের পরিস্থিতিতে ভেন্টিলেটরে নিলেও করোনা রোগীর বাঁচার আশা থাকে না।

এখানে একটি সুক্ষ্ম বিষয় আলোচনা করা চাই। প্রাথমিক পর্যায়ে ( Early Phase) অর্থাৎ প্রথম ১-৬ দিনের সময় একজন ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি যার ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স নেই এবং একজন ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স আছে ব্যক্তির সাইটোকাইন রেস্পন্স প্রায় একই রকম থাকে, পরবর্তী ৭ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত যাদের ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স আছে ,তাদের সাইটোকাইন রেস্পন্স বেড়ে যায়। আশ্চর্যজনক যে, যাদের ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স আছে, তাদের সাইটোকাইন রেস্পন্স ভাইরাস থেকে মুক্ত হবার পরও ( Recovery Phase 3-5weeks) অস্বাভাবিক বেশী থাকে। এজন্য, আক্রান্তের ১৪ দিন পর করোনা টেস্ট নেগেটিভ হবার পরও রিকভারী ফেজে পুনরায় আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এজন্য পত্রিকাতে দেখবেন লেখা থাকে, " তার করোনা টেস্ট আজ নেগেটিভ এসেছে"। দু'দিন পর আবার লেখা আসে, " তার অবস্থার আবারো আবনতি হচ্ছে...... তিনি আজ ভেন্টিলেটরেই মারা গেলেন..."। ভালো করে বুঝে নেন, যাদের ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স থাকে, যাকে আমরা প্রিডায়াবেটিক বলি, তাদের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটে; তাহলে যাদের ডায়াবেটিস, তাদের ক্ষেত্রে কি ঘটনা ঘটবে তা চিন্তা করুন।

এছাড়াও ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স যাদের আছে, তাদের নেচারেল কিলার কোষ ( Natural Killer Cell) যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে, গ্লাইকেসনের ( Glycation) মাধ্যমে নষ্ট হয়ে যায়, ফলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
ইন্সুলিন রেজিস্টেন্সের এই ধ্বংসাত্বক কার্যকলাপের মাধ্যমে অতি সহজেই বুঝা যায় যাদের ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্থুলতা এমনকি ফুসফুসের রোগ পুর্ব থেকেই ছিলো , তারা করোনার দ্বারা আক্রান্ত বেশী কেন হয় আর আক্রান্ত হলে কিভাবে ভেন্টিলেটর পর্যন্ত পৌঁছে।
আপনাদের পরিচিত যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, খোঁজ নিয়ে দেখেন তাদের কতজন এইসব মেটাবলিক রোগে ভুগছিলেন আর কয়জন সুস্থ ছিলেন।
অত্যন্ত আশার কথা হলো এই দুর্বল বিপাকীয় স্বাস্থ্য (Poor Metabolic health)যার মূল চাবি ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স তা থেকে অতি সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এবং তা মোটেও ব্যয় সাপেক্ষ নয়। শুধু আপনার ইচ্ছা ও দৃঢ়তার উপর নির্ভর করে। খুব সংক্ষেপে বলছি যেন ভুলে না যানঃ
আপনি শুধু আপনার খাদ্যাভাস একটু বদলে ফেলুন। ব্যাস, আমি যেমনটি বলছি, এটা তেমনই সহজ --ভালো বিপাকীয় স্বাস্থ্য (Poor Metabolic health) আপনার হাতের নাগালে।



কি করতে হবে তাহলে?
১। শর্করার খাদ্যের পরিমান কমিয়ে দিন এবং উথস বদলে ফেলুন। কার্বোহাইড্রেট সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল এর মতো ভালো উৎস থেকে আসা উচিত। যদি কেউ ভাত বা আলু বা রুটি বা ওটস খায় এবং খাবারের পরে তাদের রক্তে গ্লুকোজ লেভেল বেড়ে যায়, তাহলে এই খাবারগুলোকে বা নির্দিষ্ট খাবারকে এড়ানোই ভালো। কারন নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি প্রত্যেকের প্রতিক্রিয়া একই নয়। হয়তোবা আমার জন্য রুটি ঠিক আছে কিন্তু ভাত ঠিক নয় কারন এটি আমার রক্তে সুগার লেভেল হঠাত করে বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে, হয়তোবা আইসক্রিম আমার জন্য ঠিক আছে কিন্তু রুটি ঠিক নয় কারন দুই ঘন্টা পরে এটি আমার ব্লাড গ্লুকোজ খুব বাড়িয়ে দেয়। তাই নির্দিষ্ট কার্ব যেটি আপনি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে চান, সেটি খাবার পর গ্লুকোমিটার দিয়ে আপনার ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল চেক করুন। যদি নির্দিষ্ট শর্করা গ্রহনের দুই ঘন্টা পর গ্লুকোজ হঠাত করে বেড়ে যায় তাহলে; আপনি ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিস হলে তা এড়িয়ে চলা ভালো; আর আপনার পারিবারিক ডায়াবেটিস রোগজনিত ইতিহাস থাকলে বা আপনি সেডেন্টারি কর্মচারী (বেশিভাগ সময় যারা বসে কাজ করেন) হলে সেই নির্দিষ্ট শর্করা সীমিত করা ভালো।

২।ফ্যাট এর ক্ষেত্রে; অলিভ ওয়েল, সরিষার তেল, নারিকেল তেল, বাদাম, ডিমের কুসুম, ঘরে বানানো মাখন, টকদই এবং মাছ এর মতো ভালো ফ্যাট ব্যবহার করা উত্তম। এদের অধিকাংশেরই এইচ ডি এল এবং ওমেগা থ্রি এর মতো ভালো লিপিড আছে। এবং মার্জোলিন, সয়াবিন তেল অথবা যেকোন ধরনের উদ্ভিজ্জ তেল ( যেহেতু তারা high heated তাই তারা কোষ এবং কোষ প্রাচীরের জন্য প্রদাহী বা ইনফ্লামেটরি) এর মতো বাজে ফ্যাট এড়িয়ে চলা ভালো।

৩।প্রোটিনের মাত্রা ২০ শতাংশের বেশি বাড়ানো উচিত নয় এবং এটি ভালো উৎস থেকে যেমন ডিম, মাছ, ঘাস খাওয়ানো হাস- মুরগী অথবা গরু থেকে আসা উচিত।

৪। সবিরাম উপবাসের অভ্যাস করুন সাধ্যমত। সবিরাম উপবাস (ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং) আমাদের জমাকৃত গ্লুকোজ এবং ফ্যাটকে কাজে লাগাতে সাহায্য করে এবং এভাবে আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও অটোফেজীর মাধ্যমে সবিরাম উপবাস আমাদের শরীরের কোষগুলোকে পরিষ্কার করে নবজীবন দান করে।

৫। ভালো খাদ্যাভাসের পাশাপাশি একটু ব্যায়ামের অভ্যাস আর রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমের অভ্যাস আপনাকে দিবে সুস্থ দেহের নিশ্চয়তা। সুস্থ দেহেই সুস্থ মনের আধার। আর জানেন তো সুস্ত দেহে  আল্লাহ চান তো করোনা টিকতেই পারে না।

You can also read this post, this is for you