আমরা খাবার খাচ্ছি শর্করা, রক্তে আসছে চিনি এই চিনিকে নিতে হবে দেহ কোষে কারন এটা ভেংগে হবে শক্তি এর জন্য প্রয়োজন ইনসুলিন । ইনসুলিন তার কাজ করতে ব্যার্থ ফলে রক্তে চিনির পরিমান বাড়তেই থাকবে আর আপনি শক্তির অভাবে দুর্বল হতে থাকবেন কারন চিনি তো আর কোষে আসতে পারছে না তাই শক্তিও আর হচ্ছে না চিনি ভেংগে। এদিকে আপনি আরো খাচ্ছেন আরো খাচ্ছেন কিন্তু দুর্বলতা কিছুতেই কাটছে না এটাকেই সবাই বলছি ডায়াবেটিস । রক্তে চিনি বেশী কোষে নাই ।
এই অবস্হা একদিনে হয় না সময় লাগে দীর্ঘদিন । প্রথম যেটা হয় সেটা জানার চেস্টা করি । আমরা শর্করা যে খাচ্ছি সব তো চিনি হিসেবেই রক্তে আসছে তা আমরা ভাত রুটি আলু চিড়া মুড়ি বিস্কুট পাউরুটি যাই খাই না কেন সবই চিনি হিসাবে রক্তে আসে আমরা যাকে বলি গ্লুকোজ ।
এই গ্লুকোজ রক্ত থেকে কোষে আসে ইনসুলিনের সহায়তায় । কোষে আসার পর এই গ্লুকোজ ভেংগে শক্তি উৎপন্ন হয় যাকে বলে ATP . শক্তি যতটুকু দরকার সেটা তৈরী হওয়ার পর বাকী গ্লুকোজ গ্লাইকোজ্ন হিসাবে সন্চিত থাকে লিভারে, মাংসপেশীতে আর বাকী যে গ্লুকোজ থাকে তা চর্বিতে রুপান্তরিত হয়ে সন্চিত হয় পেটে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন রক্তনালী হৃদপিন্ড ব্রেইন এবং যেখানে ফাকা পায় সেখানেই ।
তাহলে কি হলো খেলেন রুটি হলো চর্বি কারন শরীরের যতটুকু শক্তির প্রয়োজন ছিলো তার তুলনায় খাওয়াটা বেশী হয়েছে আর অতিরিক্ত শক্তি চর্বি হিসাবে জমা হয়েছে । এই চর্বি জমে তালা নস্ট করেছে তাই ইনসুলিন তার কাজ করতে পারছে না । তাহলে চর্বি এলো কোথা থেকে এবার বুঝতে পেরেছেন । এখন যদি আপনি রুটি দিয়ে গরুর মাংস খান তাহলে 200 ভাগ ইনসুলিন নি:সৃত হবে এবং পুরো চর্বি জমা হবে কারন দেহ তার যতটুকু প্রয়োজন তার বেশী শক্তি চর্বি হিসাবে জমা করে রাখবে ।তাহলে গ্লুকোজ থেকেও চর্বি হলো আর যে চর্বি খেলেন সেটাও চর্বি হিসাবেই জমা হলো আর আপনিও মোটা হলেন ।
এটা হলো দ্বিতীয় পর্যায় এ সময়ে আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে কিনেতু চর্বি বাড়তে থাকে এবং ইনসুলিন রেজিস্টেন্স হতে থাকে । অগ্নাশয় বেশী ইনসুলিন নি:সরন করে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয় ।
তৃতীয় পর্যায় : ইনসুলিন সেনসিটিভিটি আরো কমতে থাকে আর অগ্নাশয়ও আর ইনসুলিন দিয়ে ঘাটতি পুরন করতে পারে না তখন খালি পেটে রক্তের গ্লুকোজ স্বাভাবিক থাকে কিনেতু ভরা পেটে বেশী থাকে ।এটাকে বলা হয় গ্লুকোজ ইনটলারেন্স সহজ কথায় খাওয়ার পরে যে গ্লুকোজ রক্তে আসছে সেটাকে কোষের ভেতর নিতে ব্যার্থ হচ্ছে ইনসুলিন ।
চতুর্থ পর্যায় : অবস্হার আরো অবনতি এখন খালি পেটেও রক্তে গ্লুকোজ বেশী থাকছে ।
পন্চম পর্যায় : এখন রোগীর খালি পেটে এবং ভরা পেটে গ্লুকোজ বেশী আছে ইনসুলিন আর কোনভাবেই রক্তে গ্লুকোজের পরিমান স্বভাবিক রাখতে পারছে না এটা ই হলো পুরোপুরি ডায়াবেটিস ।
সবাই ভাবছেন প্রথম পর্যায় কোথায় গেল !!
প্রথম পর্যায় : এটা শুরু হয় জন্মের সময় থেকে এখানে গ্লুকোজ মেটাবলিজম স্বাভাবিক থাকলেও অগ্নাশয় বিটা সেলের কর্মক্ষমতা কম থাকে ।
এতো আলোচনার মানে এই যে আপনার ডায়াবেটিস একদিনে হয় নাই তাই এটাকে একদিনে ভালো করা যাবে না আর এটাও বুঝতে হবে কি কারনে আসলে ডায়বেটিস হলো বা কাকে আপনি ডায়বেটিস বলছেন ।
এবার আসেন লিভারে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হলে কি হয় ?
স্বাভাবিক অবস্হায় খালি পেটে যখন থাকে মানুষ তখন ইনসুলিন লিভার থেকে গ্লুকোজ তৈরী হতে বাধা দেয় কিন্তু ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হওয়াতে এই বাধা দেবার কাজটি ইনসুলিন করতে পারে না তাই লিভার থেকে বেশী পরিমান গ্লুকোজ তৈরী হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা আরো বেড়ে যায় । এবং আপনি যখন খালি পেটে তখনও আপনার শরীরে গ্লুকোজ তৈরী হচ্ছে এবং খালি পেটেও আপনার ডায়বেটিস বেশী থাকছে ।
আরো কি হচ্ছে খারাপ চর্বি TG (ট্রাইগ্লিসারাইড) লিভারের এর কোষের মধ্যে জমা হচ্ছে মানে আপনার কলিজায় এখন চর্বি দিয়ে ভরে যাচ্ছে আপনার হচ্ছে ফ্যাটি লিভার ।
আপনার শরীরে TG , LDL ( খারাপ চর্বি ) বেড়ে যাচ্ছে আর HDL ( ভালো চর্বি কমে যাচ্ছে ) । এটাকে বলে ডায়বেটিক ডিসলিপিডেমিয়া ।
ইনসুলিন মাংসপেশীতে রেজিস্ট্যান্স :
মাংসপেশী যে গ্লুকোজ ব্যাবহার করতো সেটা আর করতে পারছে না এটাকে বলে গ্লুকোজ টক্সিসিটি ইনডিউসড ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স যা কিনা রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বেশী থাকার কারনে হয় ।
আপনি যখন জোরে ব্যায়াম করবেন ( HIIT ) তখন গ্লুকোজ GLUT 4 এর মাধ্যমে ইনসুলিনের সাহায্য ছাড়া সরাসরি কোষের মধ্যে ঢুকতে পারে তাই ব্যায়াম এত জরুরী ।
আমাদের যে ধমনী যেখানে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত চলাচল করে সেটা প্রসারিত করে ইনসুলিন । ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হবার কারনে ধমনী গুলো প্রসারিত হতে পারে না যার কারনে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় ।
এবার নিশ্চয় আপনারা বুঝতে পারছেন কিভাবে চর্বি আমাদের মৃত্যুর দিকে অসুস্হতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে আর এর পেছনে শর্করা খাবারের ভুমিকা কি এবার বলুন আমাদের কি আরো বেশী শর্করা খাওয়া উচিৎ !!! নাকি শর্করা খাবার কম খেয়ে ইনসুলিন নি:সরন কম রেখে চর্বি গলিয়ে সুস্হ হয়ে প্রানঘাতি রোগগুলো থেকে বাচা উচিৎ !!
No comments:
Post a Comment